Skip to main content
 

আমাদের কথা

ঝালকাঠি জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ ঝালকাঠি এক সময় বরিশালের একটি থানা ছিল। ১৯৭১ সালের ১লা জুলাই ঝালকাঠিকে মহকুমায় রূপান্তর করা হয় এবং ১৯৭২ সাল থেকে মহকুমা হিসেবে কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠিকে জেলায় রূপান্তর করা হয়। বৃহত্তর বরিশালের দক্ষিণাংশ জুড়ে ছিল সুন্দরবন আর তারই অংশ হচ্ছে ঝালকাঠি। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ও বাকেরগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বেভারেজ লিখেছেন, একসময় ঝালকাঠির বিস্তির্ণ অঞ্চল জুড়ে ছিল নদী। নদীসমূহের চরে প্রাকৃতিকভাবেই গড়ে উঠেছিল গভীর জঙ্গল যা ছিল সুন্দরবনের অংশ। একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠির পেশা ছিল নদীতে মাছ ধরা। মাছ শিকার করতে গিয়ে নিজেদের প্রয়োজনে এসব মানুষ জঙ্গল কেটে বসতি স্থাপন করে এবং ফসলের মাঠ তৈরি করে। তৎকালিন সময়ে সুগন্ধা নদীর দক্ষিণ পাড়ে একদল কৈবর্ত  জেলে বাস করত। গ্রামবাসীদের সাথে একসময় কৈবর্ত জেলেদের কোন এক বিষয় নিয়ে সংঘর্ষ বাঁধে। পরাজিত হয়ে ঐ এলাকা ছেড়ে কৈবর্ত জেলেরা বর্তমান ঝালকাঠির বাষণ্ডা খালের পশ্চিম তীরে কাটাবাখারী জঙ্গল কেটে বসতি স্থাপন করে এবং ফসলের মাঠ তৈরি করে। তখন থেকে এ অঞ্চলের নাম হয় জেলেকাঠি। পরবর্তীতে জেলেকাঠি নামটি পরিবর্তীত হয়ে বর্তমান ঝালকাঠি রূপ লাভ করে।  

জেলা ও দায়রা জজ আদালতঃ ১৯৭১ সালের পূর্বে ঝালকাঠি বরিশালের একটি থানা ছিল। ১৯/১১/১৯৭৩ তারিখে ঝালকাঠিতে মুন্সেফ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়। ঝালকাঠির প্রথম মুন্সেফ ছিলেন জনাব হুমায়ন আলী। ১৯৮৩ সালে ঝালকাঠিতে একটি সাব জজ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং প্রথম সাব জজ হিসেবে জনাব মোশারফ হোসেন দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠিকে জেলায় রূপান্তর করা হলে ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম জেলাজজ ছিলেন জনাব আব্দুল জলিল। তিনি ১৫/০১/১৯৮৫ তারিখে ঝালকাঠিতে প্রথম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হন। ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতে জেলা জজের আদালত সহ মোট আটটি আদালত রয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত একটি, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুইটি, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল একটি, সিনিয়র সহকারি জজ আদালত একটি এবং সহকারি জজ আদালত তিনটি।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালঃ ২০২১ সালের আগে ঝালকাঠিতে কোন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল ছিল না। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলাগুলো জেলা ও দায়রা জজ নিজেই বিচার করতেন। ২০২১ সালে ঝালকাঠিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ঝালকাঠি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের প্রথম বিচারক জনাব এম এ হামিদ।

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতঃ ২০০৭ সালের ১লা নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর ঝালকাঠি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, দুটি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং দুটি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সহ ঝালকাঠি ম্যাজিস্ট্রেসীতে মোট পাঁচটি কোর্ট রয়েছে। ছোট জেলা হওয়ায় ঝালকাঠিতে কোন অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদ নেই।

ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালঃ ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজের অধিন একটি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল রয়েছে। ২০১২ সালে ঝালকাঠিতে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠিত হয় । প্রথম দিকে একজন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালের বিচার কাজ পরিচালনা করতেন। ঝালকাঠি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালে প্রথম বিচারক নিয়োগ হয় ০১/০২/২০১৬ তারিখ। ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালের প্রথম বিচারক ছিলেন জনাব মোঃ মাসুদুর রহমান। খতিয়ান সংশোধন সংক্রান্ত মামলাগুলো ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালে দায়ের করা হয়।

জেলা লিগাল এইড অফিসঃ গরিব, দুঃখী এবং অসহায় মানুষকে বিনামূল্যে আইনি সেবা দেয়ার জন্য সরকার ২০১৩ সালে জেলা লিগাল এইড অফিস প্রতিষ্ঠা করেন। আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ এর বিধান অনুসারে জেলা লিগাল এইড অফিসের সেবামুলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি, বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ প্রদান এবং গরীব দুঃখী মানুষের মামলা সরকারি খরচে পরিচালনা করার দায়িত্ব একজন জেলা লিগাল এইড অফিসারের উপর ন্যাস্ত রয়েছে। একজন সিনিয়র সহকারি জজ প্রেষণে জেলা লিগাল এইড অফিসার হিসেবে দায়িতব পালন করেন। ২০১৯ সালে ৪ এপ্রিল জনাব শিবলি নোমান খান প্রথম জেলা লিগাল এইড অফিসার হিসেবে ঝালকাঠিতে পদায়িত হন।

জেলা আইনজীবী সমিতিঃ ২৫/০৯/১৯৭৩ তারিখে ১৭ জন সদস্য নিয়ে ঝালকাঠি জেলা আইনজীবী সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। ঝালকাঠি আইনজীবী সমিতির প্রথম সভাপতি ছিলেন জনাব এ্যাডভোকেট আঃ সাত্তার এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জনাব এ্যাডভোকেট আব্দুল আউয়াল। বর্তমানে ঝালকাঠি আইনজীবী সমিতির তালিকাভুক্ত সদস্য সংখ্যা ২২৪ জন এবং নিয়মিত প্রাকটিস করেন এমন সদস্য সংখ্যা ১৮২  জন।

ঝালকাঠির বিচারকদের উপর সন্ত্রাসী হামলাঃ ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর সকালে উগ্র-ধর্মান্ধ জঙ্গি গোষ্ঠি ঝালকাঠিতে বিচারকদের উপর পরিকল্পিত বর্বরোচিত ও পৈশাচিক বোমা হামলা চালায়। এই বোমা হামলায় সহকারি জজ জগন্নাথ পাঁড়ে ও এস সোহেল আহমেদের দেহ ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে এবং তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটিও দুমড়ে মুচড়ে যায়। হামলাকারীর নাম ছিল ইফতেখার হাসান আল মামুন ওরফে শিহাব। পুলিশ হামলাকারীকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করে এবং তার কাছ থেকে লিফলেট এবং অবিস্ফোরিত গ্রেনেড উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত লিফলেটে লেখা ছিল “মানব রচিত আইন মানিনা। তাগুতি আইন মানিনা। মানব রচিত আইন বাতিল কর।” সংগঠনের নাম হিসেবে জামায়াতে মুজাহিদিন বাংলাদেশ এর নাম উল্লেখ ছিল। উক্ত দুজন সহকারি জজকে হত্যার দায়ে বিচারে জঙ্গিদের মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয় । ২৯/০৫/২০০৬ তারিখে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রেজা তারিক আহমদ ১২০খ/৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে সাতজন জঙ্গিকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। যে মামলায় জঙ্গিদের ফাঁসির আদেশ হয়েছিল সে মামলার নম্বর ছিল দায়রা ২৮/২০০৬। মামলার অভিযোগ গঠনের সময় জঙ্গিদের নেতা আব্দুর রহমানকে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ পড়ে শোনানো হলে তার জবাব ছিল, ‘যারা আল্লাহর আইনে বিচার করেনা তাদের হত্যার জন্য আমি আদেশ দিয়েছিলাম। আমার আদেশে দুইজন বিচারককে হত্যা করা হয়। মানুষের আইনে আমি দোষী কিন্ত আল্লাহর আইনে আমি দোষী না। আমি কোন আইনজীবী নিয়োগ করব না।’ অন্যান্য অভিযুক্তদের নাম ছিল সিদ্দিকুল ইসলাম প্রামানিক ওরফে বাংলা ভাই, আব্দুল আউয়াল, মামুন, আতাউর রহমান সানি এবং আমজাত। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ ডেথ রেফারেন্স নং ৪৭/২০০৬ এ বিচারিক আদালতের ফাঁসির আদেশ অনুমোদন করে। দন্ডিতরা হাইকোর্ট বিভাগে কোন আপিল করেনি। দন্ডপ্রাপ্ত ইফতেখার মামুন আপিল বিভাগে জেল আপিল দায়ের করেছিল। অন্যান্যরা আপিল বিভাগে কোন আপিল দায়ের করেনি। দন্ডিত আব্দুর রহমান আপিল বিভাগে একটি দরখাস্ত দাখিল করে, যেখানে তার বক্তব্য ছিল, ‘অতএব যারা মানুষের তৈরি করা সংবিধান, বিধান বা আইনের কাছে বিচার প্রার্থনা করে তারা নিজেদেরকে মুসলমান দাবী করলেও তারা ঈমানদার নয় বলে উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিয়েছেন। কাজেই যদি কেহ ঈমান বিধ্বংসী কাজ করে তবে মুসলিম দাবী করলেই তাকে রেহাই দেয়া হবেনা।’ অপর দন্ডিত আব্দুল আউয়াল তার দায়েরকৃত দরখাস্তে উল্লেখ করেন, ‘...আমার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার বিরুদ্ধে মহামান্য উচ্চ আদালতে লিভ টু আপিল করতে ইচ্ছুক, যদি আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয় এবং ইসলামী বিধান অনুসারে বিচারকার্য পরিচালনা করা হয়।.... অতএব আমার মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করার বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে ইসলামী জুড়ি বোর্ড গঠন করে আল্লাহর আইনে পুনরায় বিচার করার আবেদন করছি, অন্যথায় সম্ভব না হলে আমার বিচার তাগুতি আইনে না করার আবেদন করছি।’ আপিল বিভাগ দন্ডিতদের এসব দাবী অলীক স্বপ্ন বলে অভিহিত করে অভিমত দিয়েছেন যে, আমাদের সংবিধান এ ধরণের বিচার পদ্ধতি স্বীকৃতি দেয়না। ইসলামী আইনে বিচারের দাবী আজগুবি ধারণা এবং আমাদের বিচার ব্যবস্থায় এটি একটি অজানা বিষয়।  [৫৯ ডি এল আর (এ ডি) পৃঃ ৩৫] পরবর্তীতে জঙ্গিদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় ।